বাগেরহাট প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরের আলোরকোলে পুরোদমে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়েছে। লইট্টা, রুপচাঁদা, খলিসা, ছুরি, ভেদা, পোয়া, দাইতনা, মেদ, জাবা, কাইন, ভোলা, ঢ্যালা, চিংড়ি, সাদা মাছসহ অন্তত একশ প্রজাতির কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে এসব শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। এভাবেই শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে সাগরপাড়ের দুবলা, মেহের আলী, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝির কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিক খালী, কবরখালী ও চাপড়া খালীস, কোকিলমনিসহ ১৫টি চরাঞ্চলে।
জেলেরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা, খুলানা, পাইকগাছা, পিরোজপুর, বরগুনা, মোংলা ও রামপালের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুঁটকি তৈরি করতে দুবলা জেলে পল্লীর অধীনে এসব চরে এসে অস্থায়ী বসতি গড়েন। আগামী ছয়মাস তারা এখানে শুঁটকি তৈরি করবেন। এজন্য তারা আলাদা পারিশ্রমিক পাবেন। এসব শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি হবে। প্রতি আমবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় বেশি মাছ পাওয়া যায় বলেও জানান জেলেরা।
পূর্বসুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখতে দুবলার জেলে পল্লীতে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে জেলেরা তাদের শুঁটকি তৈরি করতে এরই মধ্যে সাগর পাড়ের চরে আবাস গড়েছেন। দিন-রাত এসব জেলেরা সাগরে নেমে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করছেন এবং একই সঙ্গে তা শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন। জেলেদের জন্য আমরা এক হাজার ২৫টি ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। জেলেরা যেন কোনো রকম অনিয়ম করতে না পারে সেজন্য আমাদের তদারকি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুবলায় এবার জেলেদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় দস্যু দমন অভিযান সবসময়ই অব্যাহত থাকে। যদিও সুন্দরবনকে এরই মধ্যে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আরও কঠোর থাকবো।
এ দিকে মৎস্য আহরণ ও সমুদ্র যাত্রাকে ঘিরে উপকূলের জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে নানা আমেজ বিরাজ করছে। এসব পরিবারে স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধির হরেক রকম আনুষ্ঠানিকতা চলছে। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত এ মৌসুম চলার কথা রয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ (সহকারী বন সংরক্ষক) জয়নাল আবেদীন জানান, মোংলা থেকে নদী পথে দুবলা জেলে পল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এ পল্লীর সকল কর্মকাণ্ড জেলেদের ঘিরে। সুন্দরবন অভ্যন্তরের ১৩টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণকে কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলা জেলে পল্লী। এবারের জেলে পল্লী থেকে রাজস্ব আদায় বেশি হবে বলেও জানান তিনি।